রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:০৯ অপরাহ্ন
কালের খবর: নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘আড়াই কোটি টাকার দুর্নীতি কী হুলস্থুল ঘটিয়ে দিলো! অথচ লক্ষ কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চলে গেল, কী হয়েছে?’
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে নাগরিক ছাত্র ঐক্য আয়োজিত ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস, শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে মান্না এই প্রশ্ন রাখেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের যিনি গভর্নর তিনি বাহির থেকে ফিরে এসে পদত্যাগ করলেন। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলো উনি (গভর্নর) একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। উনি এটা পারেননি ঠেকাতে, তাই পদত্যাগ করেছেন!
প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে কারা জড়িত সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলে মান্না বলেন, দুর্নীতিবাজাদের যখন শেয়ার কেলেঙ্কারী হয়েছিল, তখন অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন আমাদের হাত অতো শক্তিশালী নয়, ওদের ধরতে পারবো। অর্থমন্ত্রীর হাতের পরেও যদি শক্তিশালী থাকেন তারা কারা। ওরাই কি প্রশ্নপত্র ফাঁসের মধ্যেও আছে? ব্যাংক সেক্টর শেষ হয়ে গেছে। অথচ দেশে উন্নয়নের বন্য বয়ে যাচ্ছে!
‘একটা মামলা নিয়ে এমন ঘটনা আমার জীবনেও দেখিনি। আমার জীবন একেবারে ছোট নয়। অনেক বড় বড় মামলার ঘটনাও দেখেছি। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার কাগজপত্র ছাত্ররা ছিনতাই করে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছিল। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা আপনারা জানেন। কিন্তু ৮ ফেব্রুয়ারি অবিস্মরণীয় একটি ঘটনা ঘটলো ঢাকায়, একটি অঘোষিত সেমি কারফিউ টাইপের। এমনিতেই কয়েকদিন ধরে সরকারি দলের বিভিন্ন কথাবার্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথাবার্তা মানুষের মধ্যে শঙ্কা সৃষ্টি করেছিল। আমাকে কেউ কেউ বলেছেন, পাকিস্তান আমলে ঢাকা যেমন ছিল, গতকাল (৮ ফেব্রয়ারি) ঢাকা তেমন ছিল।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলো তালুকের মতো হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যে যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন সে সেটার দখলে নেয়। অন্যান্য দলের কিছু করার থাকে না। এখানে শিক্ষার্থীরা কিসের গণতন্ত্র শিখবে?’
খালেদা জিয়ার সাজা হয়ে যাবে এটা সবাই জানতো উল্লেখ করে মান্না বলেন, ‘আওয়ামী লীগের লোকজন নাটকও করতে পারে ভাল। আপনারা কি জানেন রায় কী হবে? উনি তো খালাসও পেতে পারতেন। প্রধানমন্ত্রী আগে বলতেন টকশো টক লাগে। আরে ভাই টক কোথায় পেলেন ওটা তো তিতা হয়ে গেছে। কেউ কেউ বলেন পানসে হয়ে গেছে।’
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘বন, জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আপনি চাঁদ পর্যন্ত গেছেন এটাই শিক্ষা। মানুষ বন্যপ্রাণী থেকে আলাদা হয়েছে তার মস্তিক ও বিবেক আছে এই কারণে। এখন বিবেক বাক্সের মধ্যে রাখো। বিবেক-টিবেক দিয়ে কিছু হয় না। বিবেকের কথা তুললে আর রাজনীতি করা যাবে না। আর শিক্ষা? ওটা সবাই নিজেরা দখল করে ফেলো। সার্টিফিকেট বিক্রি হয়। সার্টিফিকেট বাণিজ্য চলে রীতিমতো। আর ওই কারণে দেখা যায় ডিগ্রীপ্রাপ্ত লোকজন টেলিভিশনের সামনে কথা বলতে পারে না। ইন্টারভিউতে যখন আসেন, তখন উত্তর দিতে পারে না।’
‘এরশাদ সামরিক শাসন জারি করে ফর্মান জারি করেছিলেন, কোথাও প্রকাশ্যে, গোপনে, ইশারায়, ইঙ্গিতে সামরিক শাসনের বিরোধীতা করা যাবে না। আট বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে। সেদিন সারাদেশ এরকম আটকা ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল একটা দ্বীপের মতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধান সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ঢুকতে চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ঢুকতে পারেনি। সামরিক শাসকের প্রতাপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলেনি,’ বলেন মান্না।
মৎস্যকন্যার মতো একটা বিরোধী দল সংসদে আছে উল্লেখ করে জ্যেষ্ঠ এই রাজনীতিক বলেন, ‘যে বিরোধীদল, তার অর্ধেক সরকারের মধ্যে আছে। মৎস্যকন্যার ন্যায় অর্ধেক মাছের মতো, অর্ধেক মানুষের মতো। এইরকম একটা বিরোধী দল। তারও এক নেতা শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। আমি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে ভালো করে চিনি। তিনিএকজন ভালো মানুষ। এখনো পর্যন্ত তার নামে বড় কোন ঘুষ, দুর্নীতির কথা আমি শুনিনি।’
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সেদিন যখন ভিসি ঘেরাও হয়ে গেলেন, ‘পিছনের দরজা দিয়ে নাকি পালিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন ছাত্ররা গিয়ে ওনাকে ধরেছেন স্যার কথা শুনে যেতে হবে। উনি তখন ফোন করেছেন ছাত্রলীগকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি যখন গুন্ডামি করার জন্য ছাত্রলীগকে ফোন করে, তখন বাকি ছাত্রদের কী শিক্ষা দিবেন? আমাকে অনেকেই বলে, এরশাদ তার সময়ে দুইবার ডাকসুর নির্বাচন দিতে পারলো। অথচ আওয়ামী লীগ, বিএনপি এতোবার ক্ষমতায় থেকেও কেন নির্বাচন দিতে পারলো না?’
ঢাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, ‘তারা নির্বাচন দেয়নি অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। অধিকার প্রতিষ্ঠা মানে বংশ পরম্পরাই তারা দেশ চালাবে। বেগম জিয়ার প্রতি আমার যথেষ্ট সম্মান আছে। উনি এতো বড় নেত্রী, তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। দুই নেত্রীর সন্তান ছোট ছিল। এরা বড় হয়ে নেতৃত্বে আসবে, তারা নতুন যুবনেতা কেন হবে। অথচ নির্বাচন হয়নি। দেখেন এতো বড় ঘটনা জেলেই তো যেতে হচ্ছে, তারপরও দলের নেতৃত্ব ঠিক করে গেছেন। সেই নেতৃত্ব হচ্ছে উত্তরাধিকার।’
নিম্ন আদালতের ওপর আস্থা রাখা যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নিম্ন আদালতের বিষয়ে কথাবার্তা বলেছিলেন সিনহা, তাকে চলে যেতে হয়েছে। তারপর একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি থাকতে পারলেন, কিন্তু পূর্ণাঙ্গ হতে পারলেন না কেন? সিনিয়ারিটি ভাঙা হলো। এখন বিচারপতি আছে চারজন। যেই রকমভাবে আপনারা বিচারপতি নিয়োগক করেন, সেভাবে যদি বাকি সাতজনও নিয়োগ করেন, তাহলে কার ঘাড়ে কয়টা মাথা আছে, প্রধান বিচারপতি কানতে কানতে দেশ ছেড়ে চলে যাবেন।’
সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন করার দাবি জানিয়ে মান্না বলেন, ‘সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনের দাবি যেন মানা হয়। এই দাবির পথে ধিরে ধিরে দেওয়াল উঠে যাচ্ছে, দেওয়ালটা যেন সরে যায়। নতুন করে কোন দেওয়াল যেন না তোলা হয়। যদি এই দেশে আবারও ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচনের চেষ্টা করেন, তাহলে বোঝা যাবে বাংলাদেশের আগ্রগতির পথে যে কাটা ছিল, সেই কাটা আরও গভীরভাবে পুতে দেয়া হলো। যদি পরিস্থিতি সেই দিকেই যায় তার জন্য সরকার দায়ি থাকবে।’